ছবি : মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী।

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের বহুল আলোচিত পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নে ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন-পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। মঙ্গলবার ১৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী’র আইনজীবী সিনিয়র এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো : মহামারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ, অসহায়, শ্রমিক, মজুর, গরীবদের বিতরণের জন্য ২০২০ সালের ৩১ মার্চ ৩০৮ নম্বর স্মারকে পেকুয়া উপজেলা হতে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বরাবরে ১৫ মে: টন চালের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর অনুকূলে বরাদ্দকৃত চাল একই সালের ৬ এপ্রিল ২’৫০ মে: টন এবং ৯ এপ্রিল ১২’৫০ মে: টন চাল চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। এ ১৫ মে: টন চাল বিতরণ নাকরে আত্মসাত করার অভিযোগ এনে পেকুয়া উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে আসামী করে ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল পেকুয়া থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর : ০৪/২০২০ ইংরেজি। চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী (৪৯) টৈটং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পন্ডিত বাড়ির মৃত নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র।

এ ঘটনায় চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে তাঁর পদ থেকে প্রথমে সাময়িকভাবে এবং পরে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। মামলাটির প্রথম আইও ছিলেন-পেকুয়া থানার এএসআই (নিরস্ত্র) আতিকুর রহমান, দ্বিতীয় আইও ছিলেন একই থানার এএসআই (নিরস্ত্র) নাদির শাহ। তৃতীয় আইও ছিলেন কক্সবাজার সিআইডি’র উপ পুলিশ পরিদর্শক বজলুল করিম।

মামলার তদন্তে এবং প্রাপ্ত ডকুমেন্টস অনুযায়ী মামলাটির অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে মামলার এজাহারের একমাত্র আসামি চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর অব্যাহতি চেয়ে আইও বজলুল করিম ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। চার্জসীটে আইও বজলুল করিম উল্লেখ করেন-চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম থেকে ২ দফায় ১৫ মে: টন চাল দফাদার নুরুচ্ছবিহ সহ উত্তোলন করে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চৌকিদার মনছুর আলম ও চৌকিদার শাহাবুদ্দিনের পাহারায় রাখা হয়। ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল টৈটং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার এবং পেকুয়া উপজেলা সমবায় অফিসার কামাল পাশা, ইউনিয়নের মেম্বারবৃন্দ, উদ্যোক্তা, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ১৫ মে: টন চাল ২০ কেজি করে ৭৫০ জনের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। বিতরণকালে মেম্বাদের মাধ্যমে উপকারভোগীদের সনাক্ত করে স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে মাস্টাররোল সহ যাবতীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে জরুরী কাজে তখন ঢাকা যেতে হওয়ায় পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে মাস্টাররোল জমা করতে একটু বিলম্ব হয়।

এরইমাঝে চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিষয়টা নেতিবাচকভাবে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে ফেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিআইও মোঃ আমিনুল ইসলাম খোঁজখবর না নিয়ে, সবকিছু অবহিত না হয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বাদী পিআইও মোঃ আমিনুল ইসলাম তাঁর দায়েরকৃত এজাহারের সপক্ষে কোন ডকুমেন্টস ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে আইও মোঃ বজলুল করিম মামলাটির অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে মামলার এজাহারের একমাত্র আসামি চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর অব্যাহতি চেয়ে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মঙ্গলবার ১৮ ডিসেম্বর আইও এর দায়েরকৃত চার্জশীট শুনানি করে চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী’কে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।

অব্যাহতি পাওয়ার পর চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী সিবিএন-কে বলেন-“আমি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিহিংসার শিকার। তথাকথিত আত্মসাতের সাথে আমি কোনভাবেই জড়িত নই। আদালতে আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম, টেটং এর জনসাধারণ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।”

কক্সবাজারের বহুল আলোচিত পেকুয়ার ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের এই ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রামের পরিচালক দীপক চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছিলো। এ তদন্ত কমিটির অন্য ২ জন সদস্য ছিলেন, কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবস্তী রায় ও কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম। তোলপাড় করা এ ঘটনায় পেকুয়ার তৎকালীন ইউএনও সাঈকা শাহাদাত-কে অন্যত্র বদলী করা হয়।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে মোঃ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী পূণরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।